SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

বাংলা ভাষার উদ্ভব নিম্নোক্ত একটি ভাষা থেকে-

Created: 6 years ago | Updated: 1 week ago

বাংলাদেশের অধিবাসীরা প্রথম থেকেই বাংলা ভাষায় কথা বলত না। বাংলা প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষাগোষ্ঠীর অন্যতম ভাষা হিসেবে বিবর্তিত হয়েছে। তাই প্রাক- আর্য যুগের অস্ট্রিক ও দ্রাবিড় জনগোষ্ঠীর ভাষার সঙ্গে তা সংশ্লিষ্ট নয়। তবে সেসব ভাষার শব্দসম্ভার রয়েছে বাংলা ভাষায়। অনার্যদের তাড়িয়ে আর্যরা এ দেশে বসবাস শুরু করলে তাদেরই আর্যভাষা বিবর্তনের মাধ্যমে ক্রমে ক্রমে বাংলা ভাষার উৎপত্তি হয়েছে।

বাঙালি জাতি যেমন সঙ্কর জনসমষ্টি, বাংলা ভাষাও তেমনি সঙ্কর ভাষা। বর্তমান বাংলা ভাষা প্রচলনের আগে গৌড় ও পুণ্ড্রের লোকেরা অসুর ভাষাভাষী ছিল বলে অষ্টম শতকে রচিত 'আর্যমঞ্জুশ্রীমূলকল্প' নামক সংস্কৃত গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। এই অসুর ভাষাভাষী লোকেরা ছিল সমগ্র প্রাচীন বঙ্গের লোক। অসুর ভাষাই অস্ট্রিক বুলি । ড. মুহম্মদ এনামুল হক মন্তব্য করেছেন, ‘বর্তমান বাংলা ভাষা প্রচলিত হইবার পূর্বে আমাদের দেশে যে এই অসুর ভাষা বা অস্ট্রিক বুলি প্রচলিত ছিল, তাহাতে কোন সন্দেহ নাই।' অস্ট্রিক বুলির কিছু শব্দ ও বাকরীতি এখনও বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়।

বাংলা ভাষা ইন্দো-ইউরোপীয় মূল ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ মনে করেছেন, আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব পাঁচ হাজার বছর আগে এই মূল ভাষার অস্তিত্ব ছিল । আনুমানিক আড়াই হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দে মূল ভাষা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেসব প্রাচীন শাখার সৃষ্টি হয়, তার অন্যতম হল আর্য শাখা। এ থেকেই ভারতীয় আর্য ভাষার সৃষ্টি। এর কাল ১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। ভারতীয় আর্য ভাষার তিনটি স্তর :

ক. প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা (বৈদিক-সংস্কৃত), খ্রিস্টপূর্ব দ্বাদশ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ

শতাব্দী পর্যন্ত। খ. মধ্য ভারতীয় আর্যভাষা (পালি, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ), খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে খ্রিস্টীয় দশম শতক পর্যন্ত ।

গ. নব্য ভারতীয় আর্যভাষা (বাংলা, হিন্দি, মারাঠি, আসামি ইত্যাদি) খ্রিস্টীয় দশম

শতক থেকে আধুনিক কাল পর্যন্ত ।

ভারতীয় আর্যভাষার এই স্তরবিভাগ থেকে দেখা যায় যে, প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষার স্তরে বৈদিক ও সংস্কৃত ভাষা প্রচলিত ছিল। জনতার প্রভাবে এ ভাষা পরিবর্তিত হয়ে মধ্যভারতীয় আর্যভাষার স্তরে আসে। প্রথম পর্যায়ে পালি এবং পরে প্রাকৃত ভাষা নামে তা চিহ্নিত হয়। অঞ্চলভেদে প্রাকৃত ভাষা কয়েকটি শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে যায়। এর একটি ছিল মাগধি প্রাকৃত। এ ভাষার প্রাচ্যতর রূপ গৌড়ী প্রাকৃত । তা থেকে গৌড়ী অপভ্রংশের মাধ্যমে বাংলা ভাষার উৎপত্তি হয়েছে। এই পর্যায়ের অন্যান্য ভাষা হল মৈথিলি, মাগধি, ভোজপুরিয়া, আসামি ও উড়িয়া। বাংলা ভাষার জন্মকাল কেউ কেউ দশম শতক বলে নির্ণয় করেছেন।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র মতে বাংলা ভাষার উৎপত্তিকাল খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দী। কম পক্ষে হাজার বছরের পুরানো বাংলা ভাষা উৎপত্তির পর থেকে নানা পর্যায়ে পরিবর্তনের মাধ্যমে আধুনিক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। বাংলা ভাষার বিবর্তনের ইতিহাসে আদি মধ্য ও আধুনিক—এই তিন যুগের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য উপলব্ধি করা যায়। আদি বা প্রাচীন যুগের বাংলা ভাষার কাল দ্বাদশ শতক পর্যন্ত বিস্তৃত। এ সময়ের প্রধান নিদর্শন চর্যাপদ। এর ভাষা থেকে তখন পর্যন্ত তার পূর্ববর্তী অপভ্রংশের প্রভাব দূর হয়ে যায় নি, এমন কি প্রাকৃতের প্রভাবও তাতে বর্তমান ছিল। তবে এখানেই বাংলা ভাষা তার স্বতন্ত্র মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়েছে।

Content added By

Related Question

View More